কাঠের ফার্নিচার কেন প্লাস্টিকের চেয়ে ভালো?

ফার্নিচার কেনার সময় কাঠের ফার্নিচার এবং প্লাস্টিকের ফার্নিচার নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অনেকেই। তাই দাম, টেকসইতা, সৌন্দর্য এবং ব্যবহারের সুবিধা এসব বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। অনেকেই কম দাম ও সহজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের ফার্নিচার বেছে নেন। কিন্তু মূলত আসলে কাঠের ফার্নিচারের সুবিধা অনেক বেশি—দীর্ঘস্থায়ী, মজবুত এবং স্টাইলিশ!

প্লাস্টিক সস্তা হতে পারে, কিন্তু কাঠের আসবাব আপনার ঘরে এক ধরনের প্রিমিয়াম লুক এনে দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছেন, তাদের জন্য কাঠের ফার্নিচারই বেস্ট অপশন।

এই ব্লগে, আমরা তুলে ধরবো কাঠের ফার্নিচার কেন প্লাস্টিকের চেয়ে ভালো। কেন কাঠের আসবাবপত্র আপনার জন্য সঠিক পছন্দ হতে পারে এবং কীভাবে এটি আপনার ঘরকে আরও সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে তুলবে।

কেন অনেকে প্লাস্টিক ফার্নিচার কিনে?

অনেকেই আজকাল প্লাস্টিক ফার্নিচার দিকে ঝুঁকছেন—কিন্তু কেন? এর পেছনে বেশ কিছু যুক্তিসম্মত কারণ রয়েছে। প্রথমত, হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় প্লাস্টিকের আসবাব স্থানান্তর করা খুবই সুবিধাজনক। দ্বিতীয়ত, কাঠ বা মেটাল ফার্নিচারের তুলনায় দাম কম হওয়ায় বাজেট-ফ্রেন্ডলি ক্রেতাদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় অপশন।

এছাড়াও, প্লাস্টিক ফার্নিচার ওয়াটারপ্রুফ ও ওয়েদার-রেজিস্ট্যান্ট, তাই বারান্দা, গার্ডেন বা আউটডোর স্পেসে ব্যবহারের জন্য এটি আদর্শ। এগুলো মরিচা ধরে না এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়, ফলে মেইনটেনেন্স খরচও কম।

ডিজাইনের দিক থেকেও প্লাস্টিকের আসবাবপত্র বেশ এগিয়ে—বিভিন্ন রঙ ও মডেল পাওয়া যায়, যা মডার্ন হোম ডেকোরেশনে নতুন মাত্রা যোগ করে। তবে, দীর্ঘস্থায়ী ও স্টাইলিশ বিকল্প চাইলে কাঠের ফার্নিচার বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্লাস্টিক ফার্নিচার এর চেয়ে কাঠের ফার্নিচার ভালো হবার কারণসমূহ

কাঠের ফার্নিচার শুধু ঘরের শোভাই বাড়ায় না, এটি টেকসই, সুন্দর আর পরিবেশ বান্ধবও। অনেকেই এখন প্লাস্টিক ফার্নিচার ব্যবহার করলেও, দীর্ঘমেয়াদে কাঠের আসবাবই বেশি উপকারী।

দীর্ঘস্থায়ীত্ব, প্রাকৃতিক নান্দনিকতা আর পরিবেশের জন্য নিরাপদ হওয়ায় কাঠের ফার্নিচার সবসময়ই এক ধাপ এগিয়ে। তাই যদি চান টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব ফার্নিচার, তাহলে কাঠের দিকেই নজর দেওয়া ভালো।

১. স্থায়িত্ব এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার

কাঠের তৈরি আসবাবপত্র অত্যন্ত মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। সঠিকভাবে যত্ন নিলে এই ধরনের ফার্নিচার প্রায় এক প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে, প্লাস্টিকের আসবাব সহজেই ভেঙে যায় বা ফেটে যেতে পারে। অনেকেই ভারী ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক ফার্নিচার বেছে নেন, কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে—এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।

২. প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপাদান

কাঠ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি উপাদান, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কাঠের আসবাব নষ্ট হয়ে গেলেও এটি প্রাকৃতিকভাবে মাটির সাথে মিশে যায়, যা পরিবেশের জন্য উপকারী। পক্ষান্তরে, প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে এবং এটি পুনর্ব্যবহার করা কঠিন।

৩. সুন্দর ও নান্দনিক ডিজাইন

কাঠের আসবাবপত্র ঘরের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এটি ক্লাসিক্যাল থেকে মডার্ন ডিজাইনের সাথে সহজেই মানিয়ে যায়। কাঠে কারুকাজ করে এক অনন্য শৈলী তৈরি করা সম্ভব। অন্যদিকে, প্লাস্টিকের আসবাব সাধারণ ও সস্তা দেখাতে পারে—অনেকটা বাচ্চাদের খেলনার মতো।

৪. আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যসম্মত

প্লাস্টিকের আসবাব হালকা হওয়ায় বহন করা সহজ, কিন্তু গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় এটি অস্বস্তিকর হতে পারে। অল্প ধাক্কাতেই এটি পড়ে যেতে পারে। কিন্তু কাঠের আসবাব তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বসার সময় আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। এছাড়াও, কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করা অত্যন্ত সহজ। 

৫. কাস্টমাইজেশন ও রিস্টোরেশন সুবিধা

কাঠের আসবাবপত্র সহজেই নতুন ডিজাইনে পরিবর্তন বা কাস্টমাইজ করা যায়। পুরানো কাঠের ফার্নিচার মেরামত করে আবারও নতুনের মতো ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু প্লাস্টিকের আসবাব একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণত মেরামত করা যায় না, ফলে বারবার নতুন কেনার প্রয়োজন পড়ে।

৬. মূল্য ও বিনিয়োগের দিক থেকে লাভজনক

কাঠের আসবাব প্রাথমিকভাবে কিছুটা দামি মনে হলেও এটি দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য, যা অর্থের দিক থেকে লাভজনক। প্লাস্টিকের আসবাব সস্তা হলেও তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, ফলে বারবার খরচ করতে হয়।

ঘর সাজাতে কাঠের কি কি কাঠের ফার্নিচার কেনা প্রয়োজন?

ঘরকে সুন্দর ও ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে কিছু অপরিহার্য কাঠের ফার্নিচার প্রয়োজন। আসুন দেখে নিই কোন ফার্নিচারগুলো আপনার ঘরের সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা বাড়াতে পারে—

  • সেগুন কাঠের খাটঃ একটি মানসম্পন্ন কাঠের বেড ঘরের আবেদন বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিং সাইজ বেড, কুইন সাইজ বেড বা স্পেস সেভিং ফোল্ডিং বেড—পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন।
  • কাঠের ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার: পরিবারের সাথে মিলে খাওয়ার জন্য আরামদায়ক কাঠের ডাইনিং সেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৪ বা ৬ সিটের ডাইনিং টেবিল বেছে নিলে সবাই একসাথে বসে খেতে পারবেন।
  • ওয়ারড্রোব ও ড্রেসিং টেবিল: পোশাক গোছানোর জন্য ওয়ারড্রোব এবং সাজগোজের জন্য ড্রেসিং টেবিল—দুটিই ঘরকে গোছালো ও সুন্দর রাখে।
  • কাঠের সোফা সেট: বসার ঘরে কাঠের সোফা সেট থাকলে ঘর দেখতে আরও প্রাণবন্ত লাগে। এল-শেপড সোফা, মডুলার সোফা বা ফ্যাব্রিক সোফা—পছন্দ মতো বেছে নিন।
  • টিভি ক্যাবিনেট বা শেলফ: টিভি, সেট-টপ বক্স বা ডেকোরেশন জিনিস রাখার জন্য কাঠের টিভি ক্যাবিনেট ব্যবহার করুন। এটি ঘরের লুক আরও মডার্ন করে তোলে।
  • কাঠের বুকশেলফ: বইপ্রেমীদের জন্য কাঠের বুকশেলফ একটি পারফেক্ট চয়েস। ছোট স্পেসের জন্য কর্নার শেলফ বা বড় রুমের জন্য ওপেন বুকশেলফ বেছে নিতে পারেন।

কেন কাঠের ফার্নিচার প্লাস্টিকের চেয়ে দামী?

কাঠের ফার্নিচারের দাম বেশি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। আসুন জেনে নিই কেন কাঠের আসবাবপত্রের মূল্য প্লাস্টিকের তুলনায় বেশি হয়।

কাঠ একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা সংগ্রহ করতে অনেক সময় লাগে। সেগুন, শিশু বা মহোগনি কাঠের মতো শক্ত ও টেকসই কাঠ পেতে গাছের বছরব্যাপী যত্ন নিতে হয়। এত দীর্ঘ সময় ধরে গাছ বড় করার পরেই কেবল তা ফার্নিচারে ব্যবহারের উপযোগী হয়।

কাঠের আসবাব তৈরি করতে দক্ষ কারিগর প্রয়োজন, যারা হাতে নকশা করে এবং ফিনিশিং দিয়ে ফার্নিচারকে আকর্ষণীয় করে তোলেন। কাঠ কাটা, শুকানো, পালিশ করা এবং বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করার জন্য উন্নত মেশিন ও সময় প্রয়োজন, যা খরচ বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে, প্লাস্টিকের আসবাব কারখানায় দ্রুত মেশিন দিয়ে তৈরি করা যায়, তাই এর উৎপাদন খরচ কম। কিন্তু কাঠের ফার্নিচার দীর্ঘস্থায়ী, মেরামতযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর চাহিদা ও মূল্য বেশি।

কাঠের আসবাবের গুণগত মান এবং ডিজাইন যত উন্নত হয়, এর দামও তত বাড়ে। তাই বিলাসবহুল ও টেকসই ফার্নিচার হিসেবে কাঠের আসবাবপত্রের কদর সবসময়ই বেশি।

কাঠের ফার্নিচার বেছে নিলে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দীর্ঘস্থায়ীত্ব এবং একটি পরিবেশবান্ধব পণ্য— যা প্লাস্টিকের চেয়ে অনেক বেশি দামী!

শেষ কথা

সব দিক ভেবে দেখলে একথা সহজেই বলা যায়—কাঠের আসবাব শুধু ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং এটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব, এবং ব্যবহারেও অনেক বেশি আরামদায়ক। দৈনন্দিন ব্যবহারে যেটুকু স্থায়িত্ব দরকার, সেটি প্লাস্টিকের ফার্নিচারের চেয়ে কাঠের ফার্নিচার অনেক ভালো বিকল্প হিসেবে প্রমাণিত।

দাম একটু বেশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে কাঠের আসবাবই বুদ্ধিমানের পছন্দ। তাই যারা মান, সৌন্দর্য আর স্থায়িত্ব একসাথে চান—তাদের জন্য কাঠের ফার্নিচারের চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।

কাঠের ফার্নিচার নিয়ে কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তরঃ

কাঠের ফার্নিচার কি সত্যিই বেশি দিন টেকে?

অবশ্যই! উচ্চমানের কাঠ দিয়ে তৈরি ফার্নিচার যেমন শীশাম, সেগুন বা মেহগনি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সঠিক যত্ন নিলে এটি প্রায় কয়েক যুগ ধরে ব্যবহার করা যায়। হাতিলের মতো বিশ্বস্ত ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলো ক্লিন ড্রাই চেম্বারে কাঠ শুকিয়ে নেয়, যাতে ফার্নিচার মজবুত ও পোকামুক্ত থাকে।

কাঠের ফার্নিচারের যত্ন নেবেন কীভাবে?

  • নিয়মিত শুকনো নরম কাপড় দিয়ে মুছুন।
  • মাঝে মাঝে কাঠের পালিশ ব্যবহার করলে চকচকে ভাব বজায় থাকে।
  • সরাসরি রোদ ও অতিরিক্ত আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন, নাহলে ফাটল বা বিবর্ণ হতে পারে।
  • সব কাঠের ফার্নিচার পানির সংস্পর্শে রাখা যায় না, তাই ওয়াটারপ্রুফ ফার্নিচার বেছে নিন।

কাঠের ফার্নিচারে কি পোকা লাগতে পারে?

খারাপ মানের কাঠে উইপোকা বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ হতে পারে। তবে ভালো ব্র্যান্ডের ফার্নিচার বিশেষ কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে তৈরি হয়, যা পোকামাকড় প্রতিরোধ করে। তাই বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনলে এই সমস্যা এড়ানো যায় সহজেই!

কেন Mim Mattress and Furniture থেকে ফার্নিচার কিনবেন?

মিম ম্যাট্রেস এন্ড ফার্নিচার সবসময় উচ্চমানের সেগুন কাঠের ফার্নিচার তৈরি করে থাকে। তাই এখানকার আসবাবপত্র অনেক বেশি টেকসই এবং বহু বছর ব্যবহারযোগ্য। নিজস্ব কারখানা হওয়ায় আপনার চাহিদা অনুযায়ী ফার্নিচার ডিজাইন করানোর সুযোগ রয়েছে।

এখানে আপনি খাট, ডাইনিং সেট, সোফা থেকে শুরু করে orthopedic ম্যাট্রেস পর্যন্ত এক জায়গা থেকেই সবকিছু কিনতে পারবেন। Goggle এ গিয়ে সার্চ করবেন Mim Mattress and Furniture এর Facebook page অথবা Website ভিজিট করুন।

বাংলাদেশের টপ কাঠের ফার্নিচার কোম্পানি কোন গুলো?

মিম ম্যাট্রেস এন্ড ফার্নিচার ছাড়াও আরো কয়েকটি টপ কাঠের ফার্নিচার কোম্পানি আছে। যেমন- Hatil, Otobi, Navana ইত্যাদি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top